খাদ্য গ্রহণ, চলাফেরা বা বিভিন্ন রোগ-ব্যাধির কারণে আমাদের বমি বা বমিভাব হয়। আপাতত বমি করা তেমন কোনো সমস্যা মনে না হলেও, বমি অনেক জটিল রোগেরও উপসর্গ। আর বমি করলে যে কোনো মানুষ দুর্বল হয়ে যায়। তাই বমি কমাতে বা নিয়ন্ত্রণে রাখতে কিছু বিষয় অবশ্যই মেনে চলা প্রয়োজন।

চলন্ত বাসের যাত্রী কিংবা গর্ভবতী নারীর বমি হওয়াটাকে সাধারণত স্বাভাবিক বলেই ধরে নেওয়া যায়। পচা-বাসি খাবার খেয়ে বমি (ফুড পয়জনিং) হওয়াটাও তাই। তবে সব ক্ষেত্রেই বমির কারণটা একেবারে ‘সাধারণ’ কিছু না-ও হতে পারে। জটিল কোনো রোগের কারণেও সামান্য এই উপসর্গ সৃষ্টি হয়ে থাকতে পারে। পরিচিত সাধারণ রোগবালাইয়ের পাশাপাশি হৃৎপিণ্ডের সমস্যা (হার্ট অ্যাটাক), পিত্তথলির রোগ, মস্তিষ্কের টিউমার, পেটের ক্ষত (আলসার), খাদ্যনালিতে কোনো বাধা (অবস্ট্রাকশন), অ্যাপেন্ডিসাইটিসের মতো সমস্যাতেও বমি হতে পারে। আবার সাধারণ কারণে হয়ে থাকলেও অতিরিক্ত বমির কারণে সৃষ্ট পানিশূন্যতা থেকে হতে পারে কিডনি বৈকল্যের মতো জটিলতা।

বমি হলে যা করবেনঃ

বমি হলেই ঘাবড়ে যাবেন না। অল্প অল্প করে পানি, স্যালাইন ও তরল খাবার খওয়ার চেষ্টা করুন। ধীরে ধীরে তরলের পরিমাণ বাড়াতে থাকুন। এরপর একটু একটু করে নরম খাবার খেতে পারেন। বমি বন্ধ হওয়ার ঘণ্টা ছয়েক পরে স্বাভাবিক খাবার খেতে পারেন। প্রাথমিক চিকিৎসায় বমি বন্ধ না হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

বমির লক্ষণঃ

১) পানিশূন্যতা বা ডিহাইড্রেশন, অতিরিক্ত বমিতে যা জটিলাকার ধারণ করে- শক, এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।
২) সোডিয়াম, ক্লোরাইড,পটাশিয়াম, বাইকার্বোনেট জাতীয় ইলেকট্রোলাইটের ঘাটতি, যার কারণে ভারসাম্যহীনতা, দুর্বলতা, মাথা ঘোরানোর মতন সমস্যা দেখা দেয়।
৩) ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম জাতীয় মিনারেলের ঘাটতি, যা থেকে টিটানি বা ধনুষ্টংকার-এর মত সমস্যা হতে পারে।
৪) রক্তের ভলিউম কমে গিয়ে রক্তচাপ, পালস কমে যেতে পারে।

আরো পড়ুনঃ  সন্তানের সুরক্ষায় সর্তক হোন আজই

জরুরি পরিস্থিতিঃ

বমির পাশাপাশি এসব উপসর্গ বা চিহ্ন থাকলে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে—

  • বুকে ব্যথা, প্রচণ্ড পেটব্যথা, জ্ঞানের মাত্রা কমে যাওয়া (যেমন এলোমেলো কথা বলা)।
  • বমির সঙ্গে রক্ত যাওয়া, সবুজ বা পীতাভ রং, কালচে কিংবা কফির মতো বাদামি রঙের বমি হওয়া।
  • তীব্র জ্বর, তীব্র মাথাব্যথা, তীব্র তৃষ্ণা, মুখ শুকিয়ে আসা।
  • শোয়া বা বসা থেকে উঠতে গেলে মাথা ঘোরা, দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে আসা।
  • শ্বাসকষ্ট বোধ করা বা ঘন ঘন শ্বাসপ্রশ্বাস নেওয়া।
  • প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যাওয়া কিংবা গাঢ় রঙের প্রস্রাব হওয়া।

বমি হওয়ার পর রক্তচাপ বা পালস রেটের যেকোনো একটি বেড়ে বা কমে গেলেও চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। যদি একটানা বমি হতে থাকে বা রোগী দুর্বল হয়ে পড়তে থাকে, কিছুদিনের ভেতর রোগীর ওজন হ্রাস পেতে থাকে, তাহলেও চিকিৎসকের কাছে নিতে দেরি করবেন না। আর বয়স্ক ব্যক্তিরা নানা ঝুঁকিতে থাকেন। তাই তাঁদের বমি হলে অবহেলা না করে চিকিৎসা নেওয়াই উত্তম।

বমির কারণ :

সাধারণ খাবারের সমস্যা, যানবাহনে যাতায়াত ইত্যাদি কারণ ছাড়াও বয়স, লিঙ্গ, অবস্থান ভেদে বমির ভিন্ন ভিন্ন কারনে হতে পারে,

যেমনঃ

১) গর্ভাবস্থাঃ হরমোন জনিত প্রভাবে গর্ভকালীন বমি হয়। কখনো কখনো প্রথম গর্ভকালীন সকালের দিকে অতিরিক্ত বমি বমি হয়। এ অবস্থাকে হাইপার ইমেসিস গ্র্যাভিডেরাম বলে।

আরো পড়ুনঃ  জেনে নিন গাড়ির নাম্বার প্লেট ও বর্ণের আসল অর্থ

২) ঔষধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াঃ বিশেষত ক্যান্সার রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত ঔষধ, তীব্র বেদনানাশক মরফিন-প্যাথেডিন জাতীয় ঔষধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ায় বমি হয়।

৩) তীব্র ব্যথা যেমনঃ পেটের ব্যথা, বুকের ব্যথা ইত্যাদি।

৪) মাইগ্রেন পেইন।

৫) উচ্চ রক্তচাপ এবং নিম্ন রক্তচাপ।

৬) মস্তিষ্কে টিউমার বা ব্রেন টিউমার, মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ ও জমাট বাঁধা।

সতর্কতা ও করনীয়ঃ

১) বমি আসলে যদিও বমি চাপিয়ে রাখা খুব কঠিন ব্যাপার। তবে বমি আসলে বমি করুন। বমি চাপিয়ে রাখবেন না। অনেক সময় খাবারে বিষক্রিয়া থেকে বমি হতে পারে। বমি পেট থেকে বিষক্রিয়া বের হয়ে যায়।এতে একটু স্বস্তি লাগবে।

২) বমি বমি ভাব হলে হাঁটতে পারেন। কমপক্ষে ২০ মিনিট হাঁটুন। হাঁটলে বমি বমি ভাব দূর হবে।

৩) জোরে দম নিতে পারেন।

৪) খাবার না খেয়ে অনেকক্ষণ খালি পেটে থাকলেও বমি হতে পারে। তাই পেট খালি রাখবেন না। তবে এমন খবার খাওয়া উচিত যা আপনার হজমে সমস্যা না করে।

৫) আদা চা খেলে অনেক সময় বমি কমে। আদা বমি প্রতিরোধের সাহায্য করে। তাই বমি এলে আদা চা খেতে পারেন।

৬) তৈলাক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন, যে খাবার দেখলে বা খেলে বমির উদ্রেক হয় তাও এড়িয়ে চলুন।

৭) চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ সেবন করতে পারেন।

আরো পড়ুনঃ  জামের বিচি দিয়ে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ, কিন্তুু জামের বিচি কিভাবে ব্যবহার করতে হয় সেটা জেনে নিন।

৮) অতিরিক্ত বমি হলে বা পানিশূন্যতা বা লবণশূন্যতা দেখা দিলে অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।

মনে রাখবেন স্বাস্থ্যগত যেকোন সমস্যাকে কোন ভাবেই অবহেলা করা যাবে না,  সে ক্ষেত্রে একজন রেজিস্টার্ড এমবিবিএস চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।


উপকারি লেখা হলে সবার সাথে শেয়ার করুন। এতোটুকুই আমাদের অনুপ্রেরণা। ভালো থাকবেন।